গাজিয়াবাদের অন্দরমহল থেকে আগ্রার তাজমহল

(২১/০৪/২০১১ -২৪/০৪/২০১১)

রাজকুমার রায়চৌধুরী



আমাদের আগ্রা যাওয়ার পরিকল্পনাটা আচমকাই শুরু হয়েছিল। প্রথমে ঠিক ছিল গুড ফ্রাইডের ছুটিতে আমরা নৈনিতাল ঘুরতে যাব। পরে পৌলমীর মত বদলে যায়- ‘আরে দিল্লী এসে আগ্রা দর্শন না করলে আফশোসের শেষ থাকবে না’। অগত্যা আগ্রা ভ্রমণ। আনন্দের খবর হল যে আমাদের এই ভ্রমণে পৌলমীর মামার সস্ত্রীক যোগদান।
হোটেল, ট্রেনের টিকিট আমাদের নেট মারফত বুকিং করাই ছিল। সাথে নেটের সাহায্যে আগ্রার সরকারি পর্যটন কর্মচারীর সাথে যোগাযোগ ও ছিল। ফলে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা ছিল না। আমাদের ইচ্ছা ছিল আগ্রা দর্শনের সাথে মথুরা-বৃন্দাবন দর্শন করে নেওয়া। আমাদের আগ্রা থেকে ফেরার আগের দিন মামাদের দিল্লী থেকে হাওড়া যাওয়ার টিকিট ছিল। আমরা ভেবে রেখেছিলাম ২২ তারিখ, শুক্রবার আগ্রার তাজমহল দেখে ফতেপুর সিক্রী ঘুরে আসব। যদি সম্ভব হয় তবে সেদিন মথুরা –বৃন্দাবন, নয়তো পরেরদিন। সেক্ষেত্রে মামাদের হয়তো বৃন্দাবন দেখা হয়ে উঠবে না।
কিন্তু ২০ তারিখ রাতে সরকারী ভ্রমণ কর্মচারীকে ফোন করে আমাদের পরিকল্পনা রাতারাতি বদলে গেল। জানতে পারলাম, প্রতি শুক্রবার তাজমহল বন্ধ থাকে। সুতরাং ২২ তারিখ আমাদের তাজমহল দেখা হবে না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২১ তারিখ ওখানে পৌঁছে রাতে চাঁদের আলোয় তাজমহলকে উপভোগ করব। কিন্তু কথায় কথায় জানতে পারলাম রাতে তাজমহল বন্ধ থাকে। আগ্রা ফোর্টের লাইট এণ্ড সাউণ্ড দেখা যেতে পারে। তবে সেটা যদি ৭টার সময় যাই তবেই। অগত্যা ঠিক হল পরের দিন মথুরা-বৃন্দাবন সহ ফতেপুর সিক্রী ঘোরা হবে। তারপর দিন তাজমহল। আর মামারা চলে গেলে আমরা আমাদের মত আগ্রা ফোর্ট দেখে নেব।
যাত্রা শুরু








আমাদের টিম



যথারীতি আমরা নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে বিকাল ৩ টা ৩০ এর গোয়া এক্সপ্রেস ধরে বিকাল ৫টা ৩০ নাগাদ আগ্রা এসে পৌঁছালাম। যেহেতু মামারা পরে ঠিক করেছিল আমাদের সাথে যাবে, ট্রেনের সীট মামাদের ছিল আলাদা, তাই আমরা ঠিক করলাম দুই ঘণ্টার জন্য আমরা মামাদের সীটে বসে গল্প করতে করতে যাব। যখন টি টি এল, আমাদের টিকিট চাইল তখন আবিষ্কার করলাম আমাদের দুজনের কারোরই ভোটার কার্ড আনা হয় নি। মাথার উপর বাজ পড়ল। টি টি দাবি করল ৭৯০ টাকা দিতে। মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট করে ১০০ টাকায় রফা হল।
তাজমহল দেখতে গেলে আসল স্টেশন হল আগ্রা ক্যান্ট। স্টেশনে নেমে নেট মারফত ভাড়া করা হোটেল অমর যাত্রী নিবাসে এলাম। ভাল ডিস্কাউন্টে ঘর বুকিং করেছিলাম। (মামাদের পরে বুকিং করা হয়েছিল। ওদের হোটেল ছিল এম জি রেসিডেন্সি। পরে দেখলাম সেই হোটেলটা আমাদের থেকে তাজমহলের একটু কাছে।) অমর নিবাসে গিয়ে যখন রুম চাইলাম তখন একটা সাদামাটা রুমে আমাদের পাঠাল। এই ঘরে না আছে ঠিক ঠাক আলমারি, ঘর অতি ছোট আর সাথে রেগুলেটর বিহীন ফ্যান। পৌলমী বিরক্তি প্রকাশ করল। আমরা ঠিক করলাম রাতে খেয়ে ঘরে ঢোকার সময় রিসেপশনে এ নিয়ে কথা বলব। যদি দেখি মামাদের হোটেল পছন্দ হয়েছে তো আমরা সেখানে চলে যাব। সেই অনুযায়ী আমরা বেরোলাম রাতে মামাদের সাথে একসাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। ঠিক হল রাতে তাজমহল দেখতে যাওয়া হবে। যদিও সবকিছু বন্ধ আছে তবুও আন্দাজ করে নেওয়া তাজমহল আমাদের হোটেল থেকে কত দূরে আছে এবং ২৩ তারিখ সকালে তাজমহল দেখে মামারা দিল্লীর ট্রেন আদৌ ধরতে পারবে কিনা।
অটো আমাদের তাজমহল থেকে এক কিমি দূরে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে হেঁটে তাজমহল ঢোকার গেটে এলাম। তাজমহল যাওয়ার রাস্তাটা বেশ আলোকোজ্জল,প্রশস্থ এবং পরিস্কার ও পরিছন্ন। তাজমহলের বন্ধ বড় ফটকের কাছে এসে আমাদের যাত্রা থেমে গেল। বাইরে থেকে তাজমহল দর্শন করেই আমাদের পথের ক্লান্তি অর্ধেক কেটে গেল। পাশে বসে থাকা সরকারি গার্ডের কাছে জানতে পারলাম যে আগে শুক্রবার সকলের জন্য বিনা পয়সায় দর্শনের জন্য খোলা থাকত। কিন্তু এখন সে ব্যবস্থা আর নেই। জানলাম সকাল ছটা থেকে তাজমহল খুলে যায়। ঠিক করলাম আমরা ভোরের তাজমহল দেখব। আসার পথে আমরা রাস্তায় এক রেস্টুরেণ্ট থেকে খাওয়া দাওয়া করলাম। কথায় কথায় জানলাম ওরা মথুরা বৃন্দাবন- ফতেপুর সিক্রীর গাড়ি করে দেবে কম খরচে- ২৪০০ টাকায়। গাইডের ব্যবস্থা ও করে দিল। গাইডের খরচ আলাদা। আমরা রাজি হয়ে গেলাম। এরপর হোটেলে ফিরে আমরা যখন ঘর নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলাম তখন আমাদের আশাতীত ভাল ঘরে ব্যবস্থা করে দিল।
বৃন্দাবন দর্শন
যারা নিত্য কেবল ধেনু চরায় বংশীবটের তলে
যারা গুঞ্জাফুলের মালা গেঁথে পরে পরায় গলে
যারা বৃন্দাবনের বনে
সদাই শ্যামের বাঁশি শোনে
যারা যমুনাতে ঝাঁপিয়ে পরে শীতল কালো জলে।
যারা নিত্য কেবল ধেনু চরায় বংশীবটের তলে।।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বৃন্দা শব্দের অর্থ তুলসী। তবে কবির কবিতায় বা কাব্যে যে তুলসী বনের উল্লেখ আছে, বাস্তবে বৃন্দাবনে তার কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। শুধু চারধারে বাড়ি আর বাড়ি। আর দুই একটা মন্দির। তার উপর যদি পাণ্ডার পাল্লায় পড়া যায় তবে অর্থের দাবিতে সকল ভক্তি নিমেষে উধাও হবে।






বাঁকে বিহারীর মন্দির


আমাদের গাড়ি এসে থামল বাঁকে বিহারী মন্দিরের সামনে। বাঁকে কথার অর্থ হল তিন রাস্তার মিলন স্থল। বিহারী কথা অর্থ হল সদা আনন্দময়। মন্দিরে বাঁকে বিহারী কে দর্শনের সময় সকাল ৮ তা থেকে দুপুর ১২ টা আর বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা। ভগবান কে এখানে বালক রূপে পূজা করা হয়। সেই কারণে এই রকম দর্শনের সময়। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নিম্বারকা সম্প্রদায়ের স্বামী হরিদাস। ১৮৬২ সালে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। যদিও মন্দির ট্রাস্টের ওয়েব সাইটে উল্লেখ আছে স্বামীজির নাম, কিন্তু এক মন্দিরের সামনে এসে রাঘবেন্দ্র শেঠ ও লক্ষণ শেঠের নাম দেখলাম।





রাঘবেন্দ্র শেঠ ও লক্ষণ শেঠের নাম উপরে লেখা


গাইডের বর্ণনায় এরা দুইজনে মিলে মন্দিরের প্রটিষ্ঠা করেন। মন্দিরের কিছু অংশ গড়তে ৮৬ মন সোনা ব্যবহার করা হয়েছে। গাইডের কথা অনুযায়ী রাঘবেন্দ্র শেঠ সন্তানের জন্য স্বামীজীর কাছে মানত করে সন্তান লাভের পর এই মন্দির গড়েন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই কথা মূল ওয়েব সাইটে উল্লেখ নেই।




১২ মণ ওজনের স্বর্ণদণ্ড



মজার কথা এই যে স্বামীজীকে ভগবান তূল্য করে তোলার জন্য মানসিক নিপীড়নে অবহেলিত তাঁর স্ত্রীর আত্মহত্যাকে ওয়েবসাইটে আত্মত্যাগ হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাঁকে বিহারীর মন্দির দর্শন করে আদি মন্দির দর্শনে গেলাম। কথিত আছে কৃষ্ণ কালীয় নাগ দমনের সময় এই জায়গায় বিশ্রাম করেছিলেন। তবে সেখানে দর্শনের থেকে টাকার গল্পই বেশি প্রাধান্য পেল। আমরা ফাঁদে পা বাড়ালাম না।

ইস্কন

আসার সময় ইস্কনের কৃষ্ণ মন্দির দেখে মথুরায় কৃষ্ণের মন্দির দর্শনের জন্য রওনা হলাম। ইস্কনের মন্দির দর্শনের সময় একটা মজার ঘটনা














ঘটল। সবাই মন্দির দর্শনে গেছে। মন্দির দর্শনে অনীহা থাকায় আমি রইলাম গাড়িতে। কিন্ত গাড়ির ভেতরের গরম আমায় বাইরে আসতে বাধ্য করল। এরপর মন্দিরে ঢুকে দেখি এক জন লোক মোবাইলে মন্দিরের ভেতরের ফটো তুলছিল। এক সন্ন্যাসী তাকে বারণ করলেন। সন্ন্যসীর কথায় বাংলা টান শুনে আমি আলাপ জমালাম। সন্ন্যাসী নিজের ভাষার লোক পেয়ে মনের দুঃখ উজার করলেন। আদতে তিনি মুসলমান। নদীয়ার ইস্কন থেকে ঊত্তরপ্রদেশের ইস্কনে তাকে পাঠানো হয়েছে। এখানে এসে কাজের সামান্য গাফিলতির অজুহাতে ম্যানেজারের হাতে শারীরিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছে্ন। তাঁর কথার মধ্যে একটা বেদনা ছিল, সাথে ভিন্ন সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায়ে দীক্ষা গ্রহনের জন্য অপরাধবোধ। তাঁকে স্বান্তনা দিয়ে হাসতে হাসতে বললাম কৃষ্ণের নাম নিয়ে পাল্টা ম্যানেজারকে আঘাত করে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে।

মথুরা দর্শন

এরপর আমরা মথুরা দর্শনে রওনা হলাম। পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর ১২টা বেজে গেল। আমি গেলাম না। মন্দিরে ভগবানের দর্শন বন্ধ হলেও শুনলাম কংসের কারাগার এই সব দেখার নাকি ছিল। তবে মথুরার মন্দিরে ফটো তোলা বারণ।মন্দিরের পাশেই একটা মসজিদ দেখা যায়। ওটা ঔরঙ্গজেবের তৈরী। বলা হয় কৃষ্ণের জন্মস্থানেই এই মসজিদ বানানো হয়েছে। মথুরা থেকে দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা এগোলাম ফতেপুর সিক্রির দিকে। যেতে যেতে গাইডের মুখে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস শুনতে শুনতে আমরা হারিয়ে গেলাম এক অন্য জগতে।

ফতেপুর সিক্রী

ফতেপুর সিক্রীর ইতিহাস বলার আগে আগ্রার ইতিহাস একটু বলে নেওয়ার দরকার। আগ্রার ইতিহাসে আমূল পরিবর্তন আসে যখন প্রথম পাণিপথের যুদ্ধে ১৫২৬ খ্রীঃ বাবরের হাতে দিল্লীর সুলতান ইব্রাহিম লোদি পরাস্ত ও নিহত হন। বাবরের পুত্র হুমায়ুন বাদলগড় দূর্গ (আগ্রা দূর্গ) দখল করেন। ১৫৩০ সালে হুমায়ুন দিল্লীর বাদশাহ হন। ১০ বছর পর শেরশাহের কাচ্ছে পরাজিত হয়ে আগ্রা দূর্গ হাতছাড়া হয়। পরে আকবরের হাতে ১৫৭৩ সালে আগ্রা দূর্গ নতুন রূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।




যাত্রাপথে


আকবর ছিলেন উদার মনের মানুষ। তিনি আগ্রার সিক্রী গ্রামের ফকির সেলিম চিস্তি সাহেবের ভক্ত ছিলেন। রাজস্থান থেকে পায়ে হেঁটে তিনি এসেছিলেন ফকির বাবার কাছে সন্তান মানত করতে। ফকির বাবার দয়ায় যোধা বাঈয়ের গর্ভে আকবরের এক পুত্র সন্তান হল, নাম রাখলেন সেলিম। এরপর চিতোর আর রণথোম্বর জয় করে ১৬৫৯ সালে এক বিশাল জয়সূচক দরজা তৈরী করলেন। নাম দিলেন বুলন্দ দরওয়াজা। আর আগ্রা থেকে ৩৭ কিমি দূরে সিক্রীকে নতুন সাজে সাজিয়ে নগর গড়ে তুললেন। নাম দিলেন ফতেপুর সিক্রী। ইচ্ছা ছিল এখানেই তাঁর রাজদরবার চালাবেন। কিন্তু ফতেপুর সিক্রীর পরিবেশ ও আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ার কারণে তাঁকে পুণরায় আগ্রা ফিরে যেতে হয়।
সময় আমাদের কম থাকায় আমরা বুলন্দ দরওয়াজা দেখেই খান্ত থাকলাম। দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস দেখার সুযোগ ঘটল না। কারণ আমাদের নজর ছিল আগ্রা দূর্গর দিকে।





বুলন্দ দরওয়াজা





বুলন্দ দরওয়াজার অন্দরমহল (শ্বেত পাথরের বেদীটি চিস্তিসাহেবের দরগা)







চিস্তি সাহেবের সমাধি ক্ষেত্র

আগ্রা দূর্গ

রাস্তায় যেতে যেতে এক বিশাল জ্যামে আটকা পড়লাম। সন্ধ্যা ৬ টায় আগ্রা দূর্গের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, আবার খোলে ৭ টার সময় লাইট এণ্ড সাউন্ডের জন্য। এক একটা মুহুর্ত আমাদের কাছে খুব দামী হয়ে উঠল।
দেরীতে হলেও অবশেষে আগ্রার সদর দরজায় গিয়ে আমরা পৌঁছালাম। তখন ৬টা বেজে ১০ হয়েছে। গার্ডের সাথে কথা বলে, কিছু বকশিস দিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম। প্রকৃতি আমাদের সহায়। গরম কাল বলে এখানে সন্ধ্যা হয় ৭ টার কাছাকাছি। বিকালের আলো ছিল যথেষ্ট। ফলে আমরা আরাম করে আগ্রার ভিতর দেখতে সক্ষম হলাম।
আগ্রার দূর্গ দেখতে দেখতে মনে হল আকবরের আমল থেকে শাহাজাহান পর্য্যন্ত প্রত্যেকেই স্থাপত্যে, শাসন ব্যবস্থায় স্বকীয় অবদান রেখে গেছেন। আকবরের সময় আগ্রার দূর্গ নব রূপায়নে আট বছর অতিবাহিত হয়। রাজস্থানেরর বারাউলি থেকে আগ্রা দূর্গের লাল ইট আনা হয়।





দূর্গের প্রধান ফটক

তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়ের প্রতি কঠোর নজর দেন। দূর্গের ভেতর একটি ঘণ্টা থাকত,সাধারণের জন্য দূর্গের বাইরে থেকে একটি লম্বা দড়ি দিয়ে ঐ ঘণ্টা বাঁধা থাকত। জনসাধারণের যে কেউ ধর্ম নির্বিশেষে সুবিচারের আশায় সেই দড়ি আকর্ষণ করতে পারত। ঘণ্টাধ্বনি শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিচার সভা ডাকতেন।
আকবরের পৌত্র শাহাজাহান,দূর্গের বর্তমান রূপ দান করেন। তিনি মার্বেল পাথর খুব পছন্দ করতেন। প্রযুক্তিগত ব্যবহারে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি মুসামান ভুর্জ নামে মার্বেল পাথরের অষ্টভূজ গম্বুজ স্থাপন করেছিলেন যেখানে তিনি জীবনের শেষ সাত বছর নিজ পুত্র ঔরঙ্গজেব হাতে গৃহবন্দী ছিলেন। এখান থেকে আজও তাঁর সৃষ্টি, মুমতাজের স্মৃতিসৌধ তাজমহল দেখতে পাওয়া যায়।





শাহাজাহানের গৃহবন্দী জীবন

আজকের দিনে আমরা গরম থেকে নিষ্কৃতি পেতে বৈদুতিক ওয়াটার কুলার ব্যবহা্রের মাধ্যমে শীতল বাতাসের স্পর্শ লাভ করি। তিনি সেই সময় প্রকৃতিকে ব্যবহার করে সুন্দর পদ্ধতিতে শীতল সমীরণ গ্রহন করতেন। তাঁর কক্ষের সামনে ফোয়ারা সমেত জলাধার তৈরি করেছিলেন। কক্ষে একটা প্রকাণ্ড পাখা ছিল, সেই পাখা মানুষ দ্বারা পরিচালিত হত। পাখার বাতাস কক্ষে জলাধার মারফত প্রবেশ করত, ফলে শীতল বাতাসের স্পর্শ তিনি লাভ করতেন।





শাহাজ়াহান যে কক্ষে থেকে শীতল সমীরণ আস্বাদন করতেন






শাহাজ়াহান যে কক্ষে থেকে শীতল সমীরণ আস্বাদন করতেন


মোগল বংশ সর্বপ্রথম ভারতে ফুল বাগান রচনা করে। দূর্গের ভিতর প্রবেশ করে রঙ বেরঙের ফুলের বাগান দেখতে পেলাম।






মোগলদের সৃষ্ট বাগান



দেখলাম দেওয়ানি খাস, দেওয়ানি আম। বিশেষ অতিথি,অভ্যাগতদের নিয়ে বাদশাহরা যে সভা করতেন সেই জায়গাকে দেওয়ানি খাস বলা হত।







দেওয়ানী খাস(জাহাঙ্গীরের আসন স্থল-এর উপর ময়ুর সিংহাসনে উপবেশন করতেন)









দেওয়ানী খাস (শাহাজাহানের আসন স্থল-এর উপর ময়ুর সিংহাসনে উপবেশন করতেন)


জনসাধারনের জন্য যে দরবার বসত, সেই স্থানকে দেওয়ানি আম বলা হত।








দেওয়ানি আম
মুসামান ভূর্জ থেকে তাজমহলকে স্বচক্ষে দেখলাম। খুব দ্রুত আমরা প্রধান প্রধান জিনিস দর্শন করে আমরা লাইট এন্ড সাউণ্ড দেখতে চলে এলাম।

লাইট এণ্ড সাউণ্ড
আলো আর শ্রুতি নাটকের সাহায্যে মোগল ইতিহাসকে অপরূপ বর্ণণা করা হয়েছে। শুনতে শুনতে মনে হল আগ্রার ইতিহাস শুধু ক্ষমতা দখল ও পারষ্পরিক অবিশ্বাসের ও রাজনৈতিক ছলা কৌশলের ইতিহাস।
আকবরের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর সেলিমের বড় ছেলে খসরু সেলিমের পরিবর্তে সিংহাসনে বসে। সেলিম যুদ্ধে খসরুকে পরাস্ত করে আকবরের মৃত্যুর আটদিনের মাথায় জাহাঙ্গীর নাম নিয়ে বাদশাহ হন। শাস্তি স্বরূপ তিনি খসরুকে অন্ধ করে দেন। পরে খসরুর ছোট ভাই খুররম (শাহাজাহান) তাকে হত্যা করে বাদশাহ হওয়ার রাস্তা সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
জাহাঙ্গীর বাদশাহ হওয়ার পর ১৬০৭ সালে বাংলার বিদ্রোহী মানসবদার শের আফগানকে হত্যা করে মেহের-ঊন-নিসাকে অধিগ্রহন করেন এবং ১৬১১ সালে তাঁকে বিবাহ করেন। তাঁর নাম দেন নূর জাহান। তিনি নূর জাহানকে এত ভালবাসতেন যে পরবর্তীকালে তাঁকেই রাজ্য ব্যবস্থার সকল দ্বায়িত্ব অর্পন করেন।
বেগম হওয়ার সাথে সাথে নূর জাহান নিজ পরিবারের লোকজনকে কাছে আনার ব্যবস্থা করতে থাকেন। নিজের মেয়ে লাডলী বেগমকে জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহইয়ারের সাথে বিবাহ দেন। নিজ ভাই আসফ খানকে উজির করেন এবং আসফ খানের কন্যা মুমতাজকে শাহজানের সাথে বিবাহ দেন।
শাহজাহান তাঁর সকল বেগমদের থেকে মুমতাজকে ভালবাসতেন। তাঁদের ভালবাসা এত গভীর ছিল যে ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে ১৪ বার গর্ভ ধারণ করেছিলেন, যার মধ্যে ৬ জন জীবিত ছিল। চতুর্দশ সন্তান গর্ভধারণের সময় শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুমতাজের মৃত্যু হয়। ভাগ্যে সে সময় চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নতি লাভ করেনি, করলে মুমতাজ মহল আর গড়ে উঠত না।


তাজমহল




তাজমহল
মুমতাজ মহল বা তাজমহল হল শাহাজাহান ও মুমতাজের ভালবাসার অপূর্ব নিদর্শন। ১৬৬০ সালে ফরাসী পর্যটক ফ্রান্সিস বোর্ণিও তাজমহল দর্শন করে লিখেছিলেন-
দু’টো বিস্ময়কর সমাধির বিবরণ দিয়ে আমি চিঠিটি শেষ করবো যারা আগ্রাকে দিল্লীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ করেছে। একটি নির্মাণ করেছেন সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর পিতা আকবরের সম্মানে এবং অন্যটি সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রীর স্মরণে তৈরি করেছেন "তাজমহল", যা অসাধারণ সৌন্দর্য্যের অধিকারী, স্বামী তাঁর স্ত্রীর শোকে এতই শোকার্ত যে স্ত্রী জীবনে যেমন তার সাথেই ছিলেন, মরণেও তিনি তার কবরের কাছেই থাকবেন।
তাজমহলের মূলে হল তার সাদা মার্বেল পাথরের সমাধি। যা অন্যান্য মুঘল সমাধির মত মূলতঃ পারস্যদেশীয় বৈশিষ্ট, যেমন আইওয়ানসহ প্রতিসম ইমারত, একটি ধনুক আকৃতির দরজা, উপরে বড় গম্বুজ রয়েছে।




প্রধান ফটকের মাথায় ২২টা চূড়া (সামনে থেকে ১১টা দেখা যায়, পিছনের দিকে আরো ১১টা)

এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তুলতে ২২ বছর সময় লেগেছিল। ১৬৩২ সালে এই সৌধ গড়া শুরু হয় এবং ১৬৪৮ সালে তা সম্পূর্ণ হয়। সৌধের প্রধান ফটকের মাথায় ২২টা চূড়া সেই কার্যসময়কে চিহ্নিত করে।




তাজমহলের স্থাপত্যকলার নিদর্শন

তাজমহলের স্থাপত্যকলা ভারতীয়, ইসলামীয়, তুর্কী এবং পার্সীয় কলার সমন্বয়ে গঠিত।




তাজমহলের স্থাপত্যকলার নিদর্শন




তাজমহলের স্থাপত্যকলার নিদর্শন

তাজমহল নকশা কে তৈরী করেছিলেন এ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও মূল নকসা গঠনে ওস্তাদ আহমেদ লাহুরীর নাম অগ্রগণ্য। যদিও তাজমহল কোন একজন ব্যক্তির দ্বারা নকশা করা নয়। এ ধরনের প্রকল্পে অনেক প্রতিভাধর লোকের প্রয়োজন। বিভিন্ন উৎস থেকে তাজমহল নির্মাণ কাজে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়।
• পারস্যদেশীয় স্থপতি, ওস্তাদ ঈসা; চত্বরের নকশা করার বিশেষ ভূমিকায় অনেক স্থানেই তার নাম পাওয়া যায়।
• পারস্য দেশের (ইরান) বেনারসের 'পুরু'; ফারসি ভাষার এক লেখায় তাকে তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করেছে।
• বড় গম্বুজটির নকশা করেছিলেন ওত্তোমান সাম্রাজ্য থেকে আসা ইসমাইল খাঁন,যাকে গোলার্ধের প্রথম নকশাকারী এবং সে যুগের একজন প্রধান গম্বুজ নির্মাতা মনে করা হয়।
• কাজিম খাঁন, লাহোরের বাসিন্দা, বড় গম্বুজের চূড়ায় যে স্বর্ণের দণ্ডটি ছিল, তিনি তা গড়েছিলেন।
• চিরঞ্জিলাল, একজন পাথর খোদাইকারক যিনি দিল্লী থেকে এসেছিলেন; প্রধান ভাস্কর ও মোজাইকারক হিসেবে নেওয়া হয়েছিল।
• পারস্যের (সিরাজ, ইরান) আমানত খাঁন, যিনি প্রধান চারুলিপিকর (তার নাম তাজমহলের প্রবেশপথের দরজায় প্রত্যায়িত করা আছে, সেখানে তার নাম পাথরে খোদাই করে লেখা আছে)
• মোহাম্মদ হানিফ রাজমিস্ত্রিদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
• সিরাজ, ইরান থেকে মীর আব্দুল করিম এবং মুক্কারিমাত খাঁন, যারা ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দিকগুলো সামাল দিতেন।
তাজমহলকে এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিসম অর্থাৎ যেদিক থেকে সৌধটিকে দেখা হোক না কেন তাকে একই রকম লাগবে। সৌধের ভিতর এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে তা যেন কোরানে বর্ণিত জন্নতের সমতূল্য। ভিত্তি কাঠামোটি বিশাল এবং কয়েক কক্ষবিশিষ্ট। প্রধান কক্ষটিতে মুমতাজ মহল ও শাহজাহানের স্মৃতিফলক বসানো হয়েছে, তাদের কবর রয়েছে এক স্তর নিচে।
সৌধের বাইরে ভিত্তির প্রতি কোনায় যে চারটি মিনার আছে তা সৌধের বাইরে ২.৫ ডিগ্রী বাঁকা। ভূমিকম্প বা অন্য কোন দূর্যোগে মিনার ভেঙ্গে পড়লেও যাতে সৌধের কোন ক্ষতি না হয় সে কারণে এরূপ ব্যবস্থা করা হয়েছে।







সন্ধ্যাবেলার তাজমহল
সৌধের চারপাশে একটি বড় চারবাগ (মুঘল বাগান পূর্বে চার অংশে বিভক্ত থাকত) এক মনোরম শান্তময় পরিবেশ গড়ে তুলেছে।
৩০০ মিটার X ৩০০ মিটার জায়গার বাগানের প্রতি চতুর্থাংশ উচু পথ ব্যবহার করে ভাগগুলোকে ১৬টি ফুলের বাগানে ভাগ করা হয়। মাজার অংশ এবং দরজার মাঝামাঝি আংশে এবং বাগানের মধ্যখানে একটি উঁচু মার্বেল পাথরের পানির চৌবাচ্চা বসানো আছে এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি সরল রৈখিক চৌবাচ্চা আছে যাতে তাজমহলের প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া বাগানে আরও বেশ কিছু বৃক্ষশোভিত রাস্তা এবং ঝরনা আছে।
পরবর্তীকালে বাগানের গোলাপ, ডেফোডিল, বিভিন্ন ফলের গাছসহ অন্যান্য গাছ-গাছালির অতিপ্রাচুর্যের কথা জানা যায়। মুঘল সম্রাটদের উত্তরোত্তর অবক্ষয়ের সাথে সাথে বাগানেরও অবক্ষয় ঘটে। ইংরেজ শাসনামলে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ এর দ্বায়িত্ব ইংরেজরা নেয়, তারা এ প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যকে পরিবর্তন করে নতুন করে লণ্ডনের আনুষ্ঠানিক বাগানের চেহারা দেয়।
চত্বরের একেবারে শেষে বেলেপাথরের দু’টো বিশাল ইমারত রয়েছে যার সমাধির দিকের অংশ খোলা। এদের পিছন ভাগ পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দেয়ালের সমান্তরাল। দু’টো ইমারত দেখতে একেবারে হুবুহু যেন একটা আরেকটির প্রতিচ্ছবি।
পূর্ব দিকের ইমারতটি মসজিদ, অন্যটি হল জাওয়াব (উত্তর), যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারসাম্য রক্ষা করা (যা মুঘল আমলে মেহমানদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত)।
জাওয়াব আলাদা শুধু এর মেহরাম নেই আর এর মেঝে নকশা করা যেখানে মসজিদের মেঝে ৫৬৯ জন্য মুসল্লি নামাজ পড়ার জন্য কাল পাথর দিয়ে দাগ কাটা।




মসজিদ
মসজিদটির প্রাথমিক নকশা শাহজাহানের তৈরি অন্যান্য ইমারতের মতই, বিশেষ করে তার মসজিদ-ই-জাহান্নুমা অথবা দিল্লী জামে মসজিদ- একটি বড় ঘর যার উপর তিনটি গম্বুজ।




মসজিদে নামাজ পড়ার জায়গা

মুঘল আমলের মসজিদগুলোর নামাজ পড়ার জায়গা তিন ভাগে ভাগ করা থাকতোঃ বড় নামাজ পড়ার জায়গা এর দু'পাশে সামান্য ছোট নামাজ পড়ার জায়গা। তাজমহলের প্রত্যেকটি নামাজ পড়ার জায়গায় উপরে বিশাল গম্বুজ আছে কিন্তু জায়গাটি খোলা।
ইমারতটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে।




মসজিদের ভিতরের দেওয়াল থেকে তাজমহল

এই মসজিদের একটা বৈশিষ্ঠ্য হল মসজিদের ভিতর থেকে তাজমহল কে দেখলে তাজমহল্কে বড় দেখেতে লাগে, যত মসজিদের দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় তাজমহলের আকার ক্রমশ ছোট হয়ে যায়।




মসজিদের দরজার নিকট থেকে তাজমহল

তাজমহল তৈরি হয়েছে সারা এশিয়া এবং ভারত থেকে আনা বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে। নির্মাণ কাজের সময় ১,০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার জন্য।
আলো-প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে, ইয়াশ্‌ব্‌- লাল, হলুদ বা বাদামী রঙের মধ্যম মানের পাথর আনা হয়েছেল পাঞ্জাব থেকে।









চীনথেকে আনা হয়েছিল ইয়াশ্‌ম্‌- কঠিন, সাধা, সবুজ পাথর, স্ফটিক টুকরা। তিব্বত থেকে বৈদূর্য সবুজ-নীলাভ (ফিরোজা) রঙের রত্ন এবং আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমণি আনা হয়েছিল।
নীলমণি- উজ্জ্বল নীল রত্ন এসেছিল শ্রীলঙ্কা এবং রক্তিমাভাব, খয়েরি বা সাদা রঙের মূল্যবান পাথর এসেছিল আরব থেকে। এ আটাশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরেরে উপর বসানো রয়েছে।
তৎকালীন নির্মাণ খরচ অনুমান করা কঠিন ও কিছু সমস্যার কারণে তাজমহল নির্মাণে কত খরচ হয়েছিল তার হিসাবে কিছুটা হেরফের দেখা যায়। তাজমহল নির্মাণে তৎকালীন আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকের খরচ, নির্মাণে যে সময় লেগেছে এবং ভিন্ন অর্থনৈতিক যুগের কারণে এর মূল্য অনেক, একে অমূল্য বলা হয়।
তাজমহল আমরা সকাল এবং সন্ধ্যা দুইবার এসে দর্শন করে আমাদের ভ্রমন সমাপ্ত করলাম। পরদিন আমরা ঘরের দিকে ফেরার জন্য রওনা দিলাম।
প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
১) আগ্রাতে অটো ভারা এক্তূ বেশি।শেয়ারে অটো চলে না।
২) সরকারী ভ্রমণ সাহায্য অপেক্ষা বেসরকারী সাহায্য লাভজনক।
৩) নেট মারফত একদিনের হোটেল বুকিং করে আশেপাশের হোটেল দেখে পরেরদিনের থাকার সিধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্য সহায়তাঃ উইকিপিডিয়া